বাংলাবিরোধী চক্রান্ত চলছে দিকে-দিকে, রুখতে হবে হাতে হাত মিলিয়ে আমাদেরকে

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের চর সুজাপুর গ্রামের ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশায় বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়েছে। ঈদের পর

পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের চর সুজাপুর গ্রামের ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ওড়িশায় বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করা হয়েছে। ঈদের পর কাজের সন্ধানে পড়শি রাজ্যে গিয়েছিলেন ওই গ্রামের প্রায় ১০০ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে থেকে ১৬ জনকে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন আটক করে বলে জানা গিয়েছে।
কোনওরকমে এক শ্রমিক বাড়িতে খবর দিতে পারায় ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং তা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এই খবর পাওয়ার পর থেকেই আটক শ্রমিকদের পরিবারে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তাঁদের চোখে ঘুম নেই। স্বজনদের নিরাপদে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। এই ঘটনায় এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ, মৌগ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবং প্রধানের উদ্যোগে কেতুগ্রাম এক নম্বর ব্লকের বিডিও-র কাছে একটি লিখিত আবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে প্রায়শই ‘বাংলাদেশি’ তকমা পাচ্ছেন। তাঁদের বেআইনিভাবে আটক করছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। এই ঘটনা নতুন নয়। যে কারণে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আটক শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন, অবিলম্বে যেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
মুখের ভাষা, মাতৃভাষা শুনেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে! আগাপাছতলা না দেখেই রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে মানুষগুলি ‘অনুপ্রবেশকারী’। অতএব, এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসনের চোখে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুসারে এই নিরীহ মানুষগুলি ‘অপরাধী’। অত্যাচারও নামিয়ে আনা হচ্ছে তাঁদের উপর। এমনকী জোর তোড়জোড়ও দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে তাঁদের ‘পুশব্যাক’ করার জন্য। একাধিক রাজ্যে কাজে যাওয়া বহু বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক বেশ কয়েকমাস যাবৎ এমনই এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সুরাহা না-পেয়ে বাঁচাবার আর্জি নিয়ে একাধিকবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। গতমাসে উত্তরবঙ্গের ইটাহারের শ’তিনেক শ্রমিককে রাজস্থানে আটকে রাখা হয়। স্থানীয় বিধায়ক অভিযোগটি নিয়ে রাজ্য বিধানসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। শোনামাত্রই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজস্থানের বিজেপি সরকারকে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘বাংলায় কথা বলে এই বিজেপি সরকারের কাছে কী অপরাধ করেছি আমরা? ভয়ানক অবস্থা চলছে। এর প্রতিবাদে আমরা পথে নামব।’ ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন অভিযোগ পেয়েছিলেন, সেখানকার মান্নাই অঞ্চলের খিসাহার গ্রাম-সহ এলাকার প্রায় তিনশোজন বাসিন্দাকে ‘বাংলাদেশি’ দেগে দিয়ে রাজস্থানে আটক করা হয়েছিল। বিষয়টির রাজ্য পুলিসের ডিজির গোচরে এনে ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করার অনুরোধ জানান তিনি। আটক শ্রমিকদের মর্মান্তিক ছবিও বিধানসভায় দেখানো হয়।
বিজেপি-শাসিত ওড়িশাতেও বাংলাভাষী শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে সাম্প্রতিক অতীতে। কিছুদিন আগে, ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে মহারাষ্ট্র থেকে মুর্শিদাবাদের তিনজন এবং পূর্ব বর্ধমানের এক বাসিন্দাকে ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছিল। কী ছিল তাঁদের অপরাধ? ভিন রাজ্যেও তাঁরা তাঁদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলেছিলেন! তাঁদের পুশব্যাকের কাণ্ড ঘটানো হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অন্ধকারে রেখেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এই ধরনের পদক্ষেপ বেআইনি, অন্যায় এবং অনৈতিক। জানামাত্রই বিষয়টিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করেন। বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয় ওই চার ভারতীয় নাগরিককে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির অমানবিকতার রাজনীতি সেখানেই শেষ হয়নি। এবার কোচবিহারে দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীর হাতে ধরানো হয়েছে নোটিশ! অপরাধ, তিনি বাঙালি! অপরাধ, তিনি বাংলায় কথা বলেন! শুধু সেই কারণেই বংশপরম্পরায় দিনহাটার এই বাসিন্দাকে চরমভাবে হেনস্তা করার আয়োজন শুরু হয়েছে। বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে ‘পুশব্যাক’ রাজনীতিতে নয়া সংযোজন হয়েছে এই ‘এনআরসি নোটিশ’। উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে প্রমাণ করতে বলা হয়েছে যে তিনি ভারতীয়। নির্দেশ এসেছে, ১৯৬৬-’৭১ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকায় তাঁর বাবার নাম দেখাতে হবে। আর এই নোটিশ এসেছে কোন জায়গা থেকে? রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জী বা এনআরসি-খ্যাত অসম থেকে। ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলনের নামে একদা বাঙালির সাড়ে সর্বনাশ করা হয়েছিল ওই রাজ্যেই। বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শিলচরে একদল বাঙালি তরুণ-তরুণীকে তাজা রক্ত, এমনকী প্রাণ পর্যন্ত বলিদান দিতে হয়েছিল। উত্তমকুমারকে নোটিশ ধরানো হয়েছে অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের তরফে।
দেশ জুড়ে এনআরসি কার্যকর করার দাবিতে অসমের বিজেপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা দীর্ঘদিন ধরেই বাহু ফোলাচ্ছেন। আর তাতে ধুয়ো দিচ্ছেন দিল্লির এবং বাংলারও কিছু বিজেপি নেতা। তাঁদের দাবি, একমাত্র এনআরসি কার্যকর হলেই নাকি বাঙালি হিন্দু-সহ প্রকৃত ভারতবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। কিন্তু অসম ইতিমধ্যেই এনআরসির যে মাহাত্ম্য দেখিয়ে দিয়েছে, তারপরে কোনও সুস্থচিন্তার এবং গণতান্ত্রিক মানসকিতার ভারতবাসীর ওই ব্যবস্থার প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকার কথা নয়। এনআরসি সাক্ষাৎ এক আতঙ্ক এবং মানবসভ্যতার বিপরীতে ভয়াবহ লজ্জার নাম। এই ধরনের নোটিশ পাওয়া মানেই যাবতীয় শান্তি-স্বস্তি উবে যাওয়া। প্রশ্ন জাগবে, কংসরাজার বদফরমাস পূরণে ব্যর্থতার পরিণাম কি ডিটেনশনে ক্যাম্পে বন্দিত্ব? ‘বাংলা বিরোধী’ এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেননি। তাঁর প্রতিবাদে শামিল হওয়া উচিত দেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির। এই বিপদ আগামী দিনে সব রাজ্যে সমস্ত ভাষার মানুষের উপরেই নেমে আসতে পারে। তখন নিরাপদ দূরত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ নাও মিলতে পারে।
সুতরাং অবিলম্বে বাংলা ও বাঙালিকে জোট বাঁধতেই হবে। একসঙ্গে এই অসভ্যতার বিরোধিতায় নামতেই হবে।
নান্য পন্থা বিদ্যতে অয়নায়।

Thank You for Reading – 24 HRS TV

Thank you for taking the time to read our news at 24 Hrs TV.
We appreciate your trust in our platform as your source for reliable and timely Indian news.Your support encourages us to continue delivering accurate, unbiased, and impactful stories that matter to you.

Stay informed. Stay connected.
– Team 24 Hrs TV